লেবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন আপসানা বেগম এমপি:সুরাহা না হলে আইনী পদক্ষেপের ঘোষণা

লন্ডন, ০৭ অক্টোবর: পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসনের এমপি আপসানা বেগম তাঁর নিজ দল লেবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাঁর মনোনয়ন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে লেবার পার্টি। ট্রিগার ব্যালট প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে আপসানা বেগম বলেন, ওই প্রক্রিয়া নিয়ে ৫০টির বেশি অভিযোগ দাখিল হয়। কিন্তু এসব অভিযোগের কোনো সুরাহা করেনি লন্ডন রিজিওনাল লেবার পার্টি। ক্রুটিপূর্ণ ট্রিগার ব্যালট প্রক্রিয়ায় ফলাফল বাতিল করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, অনিয়মের গুরুতর অভিযোগগুলো সুরাহা না করে তাঁর মনোনয়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন।
গতকাল শুক্রবার (৭ অক্টোবর) লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারার পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসনের এমপি আপসানা বেগম। তাঁর সমর্থনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন লেবার দলের সাবেক নেতা জেরেমি করবিনি এমপি।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই এমপি বলেন, গত জুন মাসে ট্রিগার ব্যালট প্রক্রিয়া শেষ হলেও এর আনুষ্ঠানিক কোনো ফলাফল তাকে এখনো জানানো হয়নি। ট্রিগার ব্যাটল প্রক্রিয়ার অনিয়ম ও ফলাফলের বিস্তারিত জানতে চেয়ে গত জুলাই মাসে তাঁর আইনজীবী একটি চিঠি পাঠান। কিন্তু লন্ডন রিজিওনাল লেবার পার্টি ওই চিঠিরও কোনো জবাব দেয়নি।
আপসানা বেগম বলেন, ২০১৯ সালে তিনি এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই স্থানীয় লেবার দলে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপতৎরতা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচিত হওয়ার পরপর তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা করে হাউজিং সুবিধা নেয়ার মিথ্যা অভিযোগ উঠে। আবার কোনো ধরণের যাচাই-বাছাই ছাড়াই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লেবার প্রশাসন সেই অভিযোগে মামলা দায়ের করে। শেষ পর্যন্ত আদালতে ওই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং মামলার খরচ বাবত কাউন্সিল জনগণের ট্যাক্সের প্রায় ৮০ হাজার পাউন্ড গচ্চা দেয়।
আপসানা বেগম বলেন, ওই মামলায় আদালতের শুনানীতে উঠে আসে তাঁর বিরুদ্ধে হাউজিং প্রতারণার মিথ্যা অভিযোগের অগ্রভাগে ছিলেন তাঁর সাবেক স্বামী ও স্বামীর ভগ্নিপতী- যারা স্থানীয় লেবার শাখার সদস্য। ট্রিগার ব্যালট প্রক্রিয়ায়ও প্রভাব বিস্তার করেন তাঁরা।
ট্রিগার ব্যালট প্রক্রিয়ায় আপসানার সমর্থকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, হেনস্থা, বক্তব্যদানে বাধা প্রদান, ভোটদানে বিরত রাখা, ঘুষের ব্যবহার, হুট করে প্রক্রিয়া অনলাইনে সরিয়ে নেয়া এবং অনেক সদস্যকে অনলাইন লগ ইনের সুযোগ না দেয়াসহ আরও নানা অভিযোগের অডিও-ভিডিও রেকর্ড লন্ডন রিজিওনাল লেবার পার্টির কাছে দাখিল করা হয়েছে বলে জানান আপনাসা বেগম।
এক প্রশ্নের জবাবে আপসানা বেগম বলেন, তাঁর সাবেক স্বামী বিচ্ছেদের পর থেকেই নানাভাবে প্রতিশোধপরায়ণ আচরণ করছেন। আবার লেবার দলের বর্তমান নেতৃত্ব দলের সাবেক বামপন্থী নেতা জেরেমি করবিনের অনুসারী সোশ্যালিষ্ট অংশকে শায়েস্তা করতে চায়। ফলে উভয়ের কমন টার্গেটে পরিণত হয়েছেন তিনি। তিনি জানান, হাউজিং প্রতারণার মিথ্যা অভিযোগের মামলার ঘটনায় লেবার দলের সদস্য তাঁর সাবেক স্বামী ও স্বামীর ভগ্নিপতির অপতৎপরতার বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন লন্ডন রিজিওনাল লেবার পার্টিতে। কিন্তু গত প্রায় দেড় বছর পার হলেও সেই অভিযোগ এখনও সুরাহা করা হয়নি। সেটি এখনও তদন্তাধীন।
নিজেকে একজন সোশালিস্ট এবং বামপন্থী নেতা জেরেমি করবিনের অনুসারী উল্লেখ করে এই এমপি বলেন, আরও বেশকিছু আসনে করবিন পন্থীদের সরিয়ে দিতে ট্রিগার ব্যালট প্রক্রিয়ায় একই ধরণের অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ আছে।
সংবাদ সম্মেলনে লেবার দলের সাবেক নেতা জেরেমি করবিন আপসানা বেগমকে একজন সক্রিয় ও আদর্শ জনপ্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, লেবার দলের নীতি হলো সকল ব্যক্তি ও কমিউনিটির প্রতি সমান ও ন্যায়বিচার করা।কিন্তু আপসানা বেগম সেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ট্রিগার ব্যালটের মানসিক চাপ বিবেচনায় তিনি লেবার দলের নেতৃত্বে থাকা গর্ভবতী নারী সদস্যদের এই প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেয়ার নিয়ম করেছিলেন জানিয়ে করবিন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আপসানা বেগম নানা অন্যায় আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু লেবার পার্টি তাঁর প্রতি কোনো ন্যায্য আচরণ করেনি।
লেবার নেতা বলেন, একজন সংসদ সদস্যের যে কাজ তাঁর প্রায় ৮০ শতাংশ হলো সংসদীয় এলাকার জনগণের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলা এবং সমাধানে কাজ করা। আপসানা বেগম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর গত তিন বছরে ৩৮ হাজার কেইস ওয়ার্ক করেছেন। করবিন বলেন, তিনি নিজেও তাঁর নির্বাচনী এলাকায় এই হারের কেইসওয়ার্ক করেননি।
আপসানা বেগমের প্রতি সুবিচার করতে লেবার নেতৃত্বের প্রতি আহবান জানিয়ে জেরেমি করবিন বলেন, যে কোনো সময় আরেকটি সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। এ সময়ে লেবার নেতৃত্বের উচিত দলকে ঐক্যবদ্ধ করা। আপসানা বেগমের প্রতি সমর্থম অব্যাহত রাখতে তিনি স্থানীয় কমিউনিটির প্রতি আহবান জানান।
প্রসঙ্গত, ‘ট্রিগার ব্যালট’ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দলের স্থানীয় সদস্যরা ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট আসনে নতুন করে প্রার্থী বাছাই-প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে নাকি বিদ্যমান এমপির প্রতি দলীয় মনোনয়ন অব্যাহত থাকবে। এই প্রক্রিয়ায় লেবার দলের সাবেক নেতা জেরেমি করবিনের অনুসারীরা অন্যায়ভাবে বাদ পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব লন্ডনের ইলফোর্ড সাউথ আসনেও করবিন অনুসারী স্যাম টেরি ট্রিগার ব্যালটে হেরে নতুন করে প্রার্থীতার লড়াইয়ে নেমেছেন। স্যাম টেরিও ট্রিগার ব্যালট প্রক্রিয়া চরম অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় লেবার সদেস্যদের অন্তত ৩০ শতাংশ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়, কারণ ওইসব সদস্যদের নাম কাউন্সিলের ভোটার তালিকায় পাওয়া যায়নি। তবে করবিনের বিরুদ্ধে ছিলেন কিংবা বর্তমান নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের অনুসারী কোনো এমপির ট্রিগার ব্যালটে হেরে বাদ পড়ার ঘটনা নেই।

Top