কার্ডিফে বাংলাদেশ কমিউনিটির অমর একুশে পালন

বৃটেনের কার্ডিফের ইন্টারন্যাশনাল ম্যাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট তথা শহীদ মিনারে ভাষা সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আত্মমর্যাদার ৭১ বছর পালিত হয়েছে। আলোচনা সভা থেকে বক্তারা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাযা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে মাতৃভাষার টানে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে গণতন্ত্রের মাতৃভূমি খ্যাত, মাল্টিকালচারেল  বৃটেনের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের শহীদ মিনারে ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে ৫২ এর ভাষা শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বিমম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ওয়েলস বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।

মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাষা সংগ্রামের অহংকারের ৭১ বছর,উপলক্ষে বৃটেনের কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট ফাউন্ডার্স ট্রাস্টের (শহীদ মিনার কমিটি) সেক্রেটারি মোহাম্মদ মকিস মনসুরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে অমর একুশের প্রথম প্রহরে সুশৃঙ্খলভাবে একে একে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছেন কমিউনিটির সর্বস্তরের জনসাধারণ।

বৃটেনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি ও কার্ডিফ কাউন্টি কাউন্সিলের কাউন্সিলারবৃন্দ, মনুমেন্ট ফাউন্ডার্স ট্রাষ্ট কমিটি, ওয়েলস আওয়ামীলীগ, ওয়েলস কার্ডিফ বিএনপি, নিউপোর্ট আওয়ামীলীগ, ওয়েলস যুবলীগ, নিউপোর্ট যুবলীগ, ওয়েলস ছাত্রলীগ, গ্রেটার সিলেট ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল সাউথ ওয়েলস শাখা, অর্গেনাইজেশন ফর দ্য রেকগনিশন অফ্ বাংলা এ্যাজ এ্যান অফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজ অফ্ দা ইউনাইটেড নেশনস সাউথ ওয়েলস শাখা, ওয়েলস বাংলাদেশ উইমেন্স এসোসিয়েশন, ওয়েলস বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, ওয়েলস কুলাউড়া সোসাইটি ইন ইউকে, জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইন ইউকে, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, ওয়েলস বাংলাদেশ ইয়ুথ সোসাইটি ইন ইউকে, ওয়েলস বাংলা প্রেসক্লাব, এটিন বাংলা ইউকে, ওয়েলস বাংলা নিউজ, মনসুর মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক, সংগঠন, উইমেন্স প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেক জনসাধারণ ও বাংলাদেশ থেকে আগত বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকলের উপস্থিতিতে এলাকাটি হয়ে উঠে এক খণ্ড বাংলাদেশ।

অমর একুশের প্রথম প্রহরের এবারের অনুষ্ঠানে ৭১ এর একশন কমিটির ওয়েলসের সাবেক সেক্রেটারি বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ ও কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ ফিরুজ আহমদ, কার্ডিফ কাউন্টি কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি লর্ড মেয়র কাউন্সিলার দিলওয়ার আলী, কাউন্সিলার ড. বাবলিন মল্লিক, কাউন্সিলার জেসমিন চৌধুরী, মনুমেন্ট ফাউন্ডার্স ট্রাষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার আলী, সেক্রেটারি মোহাম্মদ মকিস মনসুর, ট্রেজারার আনহার মিয়া, ফাউন্ডার্স ট্রাষ্টি শেখ মোহাম্মদ তাহির উল্লাহ ও ফাউন্ডার্স ট্রাষ্টি আলহাজ্ব আসাদ মিয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, লাইফ মেম্বার ও ফ্রেন্ডস অব মনুমেন্টসহ কার্ডিফ নিউপোর্ট সোয়ানসী ব্রিজেন্ড, বৃস্টল, মোনবাউথ ও পটালবাট ক্যাফেলি ও পার্শ্ববর্তী শহর থেকে আগত বিশিষ্টজনরা সহ বিপুলসংখ্যক কমিউনিটির জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে মনুমেন্ট ফাউন্ডার্স ট্রাষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার আলী, ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ মকিস মনসুর, সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সকল লাইফ মেম্বার ও ফ্রেন্ডস অব মনুমেন্ট এবং ফাউন্ডার্স ট্রাষ্ট কমিটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানকে সফল করতে ওয়েলস বাংলাদেশ কমিউনিটির অংশগ্রহণকারী উপস্থিত সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ভাষা আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী দিনটি এখন আর শুধু শোক ও বেদনার দিন নয়। জাতি ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের সব ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার এক সর্বজনীন উৎসবের দিন। একুশ আমাদের আত্মমর্যাদার; একুশের পথ ধরেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি লাল সবুজ পতাকা। অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। মহান একুশে ফেব্রুয়ারির সেই রক্তস্নাত গৌরবের সুর বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। যার ফলে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর অমর একুশের চেতনা আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বৃটেনের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ শহরের কমিউনিটির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৭ সালে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলের নানাবিদ জটিলতা নিরসনে ও কমিউনিটির কিছু দুষ্ট চক্রের অব্যাহত চক্রান্তকে মোকাবেলা করে ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টার পর বৃটেনের ওয়েলসের ঐতিহ্যবাহী কার্ডিফ শহরের গ্রেইঞ্জমোর পার্কে কার্ডিফ কাউন্টি কাউন্সিলের প্রদত্ত নির্ধারিত জায়গায় বাঙালী জাতির অহঙ্কার ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট তথা শহীদ মিনার ২০১৯ সাল থেকে পুরাপুরি দৃশ্যমান।

Top