বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে উপদেষ্টার বক্তব্য, সিত্রাং আর রহস্যময় জাহাজ নিয়ে প্রশ্ন

গত কয়েক সপ্তাহের মত চলতি সপ্তাহেও বিবিসি বাংলার রেডিও সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পত্রলেখকরা তাদের হতাশা আর বিবিসি নিউজ বাংলার রেডিও সম্প্রচার নিয়ে তাদের অনুভূতির কথা লিখেছেন। তবে অন্য কিছু সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়েও লিখেছেন অনেকে।

শুরু করছি বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টার একটি বক্তব্য প্রসঙ্গে ভোলার চরফ্যাশান থেকে মুহাম্মদ মাসুদুল হক মাশুকের একটি প্রশ্ন দিয়ে।

সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ-বিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের কৃষি ও শিল্প খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এজন্য প্রয়োজনে দিনের বেলায় বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হবে। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে সারা দেশে যখন ব্যাপক লোডশেডিং চলছে, তখন জ্বালানি উপদেষ্টার এ বক্তব্য বেশ বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী তার এ বক্তব্যকে ব্যক্তিগত মতামত বলে অভিহিত করেছেন। পূর্বেও সরকারের দায়িত্বশীল পদে আসীন ব্যক্তিরা যখন বিতর্কিত বক্তব্য বা মন্তব্য করেছিলেন, তখনও সরকারের পক্ষ থেকে সেটাকে ব্যক্তিগত মতামত বলে প্রচার করা হয়েছিল। আমার প্রশ্ন সরকারের দায়িত্বশীল পদে আসীন থাকা অবস্থায় একজন উপদেষ্টা বা মন্ত্রী কোন ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ বা ব্যক্ত করতে পারেন কিনা?

অনেক সময়ই দেখা গেছে সরকারের মন্ত্রী বা উপদেষ্টাদের মন্তব্যকে সরকার বলে থাকেন সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা উপদেষ্টার নিজস্ব মতামত – সরকারের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই বা সেটা সরকারের কোন সিদ্ধান্তের প্রতিফলন নয়। উপদেষ্টা বা মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত মত প্রকাশে অবশ্যই কোন বাধা থাকার কথা নয়।

কিন্তু দায়িত্বশীল পদে থাকা কোন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা যখন এমন মন্তব্য করেন যেটাকে সাধারণ মানুষের সরকারি সিদ্ধান্ত বলে ধরে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে বিভ্রান্তি এড়াতে বা ভুল বার্তা যাতে না যায়, তা নিশ্চিত করতে এধরনের মন্তব্য করার ব্যাপারে একটু সংযত থাকা হয়ত সমীচীন। না হলে মানুষ সেটাকে সরকারি সিদ্ধান্ত বলে ধরেই নিতে পারে। বিশেষ করে যেখানে এখন বিদ্যুৎ সঙ্কটে বাংলাদেশের মানুষ বেশ কঠিন সময় কাটাচ্ছেন।

বর্তমান বিদ্যুৎ সঙ্কট প্রসঙ্গে লিখেছেন রাজাখালী, কক্সবাজার থেকে কাজী আখতার:

আমরা গ্রামের মানুষ, তাই আমাদেরকে ঠিক মত বিদ্যুত সরবরাহ করা হয় না। ২৪ঘণ্টার মধ্যে ১২ঘণ্টাই লোডশেডিং করতে থাকে। এই লোডশেডিংএ আমরা অতিষ্ট হয়ে গেছি। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনে না- কেউ বুঝারও চেষ্টা করে না।

আপনার হতাশার কথা আমরা বুঝতে পারছি। জুলাই মাসে সরকার বলেছিল গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে, তবে তা সাময়িক। প্রথমদিকে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক দিনে এক ঘন্টা করে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি দেওয়া হলেও এখনও শহরে গ্রামে সব জায়গাতেই অনেক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুত থাকছে না এবং মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটানোর অভিযোগ করছেন। এই মাসেই বিদ্যুত গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকে রাতেও প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানির সংকট রয়েছে। এর মধ্যেই সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চ্চা

চলতি সপ্তাহের বড় একটি খবর ছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের ব্রিটেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচন। তার নির্বাচনকে অনুকরণীয় গণতন্ত্রের নজির বলে মনে করছেন গেন্ডারিয়া, ঢাকা থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান:

২০১৯ সালের পর থেকেঋষি সুনাক পর্যন্ত মাত্র চার বছরের মধ্যে চারজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন, অথচ তারা জনগণের ম্যান্ডেটকে শ্রদ্ধা করে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও মূল্যবোধ সমুন্নত করার জন্য যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই তারা পদত্যাগ করেছেন।

ব্রিটেন যেভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ, চর্চা ও লালন করে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার এবং অন্যদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও বটে। আমি মনে করি বিভিন্ন দেশে যারা বছরের পর বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে বা রাখতে চায়, তারা ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে অনেক কিছু শিখতে ও চর্চা করতে পারে।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চ্চা যে অনুকরণীয় সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই মি. রহমান। তবে লিজ ট্রাস বলুন বা বরিস জনসন বলুন – তারা যে জনগণের ম্যান্ডেটকে শ্রদ্ধা করে স্বেচ্ছায় সরে গেছেন সেটা কিন্তু নয়। মিজ ট্রাসের সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে তার প্রশাসন আর কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে নজিরবিহীন তোলপাড় চলছিল। অনেক এমপি প্রকাশ্যেই তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে তার পদত্যাগ দাবি করছিলেন। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। তার আগে নানা কেলেঙ্কারির জেরে দলের ভেতর থেকে তীব্র চাপ ও বিদ্রোহের মুখে বরিস জনসনও তার মন্ত্রী ও এমপিদের সমর্থন হারিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।

সিত্রাং, বিদ্যুত বিপর্যয় আর রহস্যময় জাহাজ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে দাকোপ, খুলনা থেকে প্রশ্ন করেছেন মুকুল সরদার:

সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে সোমবার সন্ধ্যার কিছুটা পরে। কিন্তু আমার এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল রবিবার মধ্য রাত থেকে এবং পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। আমি ঠিক জানিনা কেন সিত্রাং আঘাত হানার বহু আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল? যাইহোক সিত্রাং এর আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কম বলা যেতে পারে। কাদির কল্লোলকে ধন্যবাদ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সিত্রাং এর খবরাখবর দেবার জন্য।

রবিবার রাত থেকেই বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাসহ বেশ কিছু জেলায় বিদ্যুৎ ছিল না। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য যা সংবাদমাধ্যমে এসেছে তা হল রবিবার থেকে টানা বৃষ্টি আর ঝোড়ো আবহাওয়ার কারণে তারের ওপর গাছপালা পড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল। সিত্রাংএর প্রভাবে সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কথাও বলা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্ষয়ক্ষতি যতটা আশঙ্কা করা হচ্ছিল তার থেকে কমই হয়েছে। আপনার ধন্যবাদ কাদির কল্লোলকে পৌঁছে দেব।

সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভেড়া ‘রহস্যময়’ জাহাজটি সম্পর্কে কৌতূহলী ছোট জামবাড়িয়া, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম মিঞা:

সাইক্লোন সিত্রাংয়ের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রে ভেসে পরিত্যক্ত জাহাজ হিসেবে এটি সেন্ট মার্টিনের ছেড়া দ্বীপে এসে আটকায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়া বা অন্য কোন কারিগরি গোলযোগের কারণে বার্জটি পরিত্যক্ত করে থাকতে পারে নাবিকরা অথবা আবহাওয়ার কারণে বার্জটি টাগবোট থেকে ছুটে গিয়ে থাকতে পারে।

ঘটনা যাই হোক না কেন সবগুলোই অনুমান নির্ভর এবং রহস্যময়। আমার জানার কৌতুহল হলো ইঞ্জিন ছাড়া মানুষ্যবিহীন মালবাহী এই বার্জটির পরিত্যক্তের আসল কারণ কি? কিভাবে জাহাজটি সেন্ট মার্টিনের ছেড়া দ্বীপে এসে ভিড়লো এবং এটি কোন দেশের মালিকানাধীন তা জানতে পারা গেছে কি?

জাহাজটির গায়ে এর নাম লেখা ছিল এম আর ৩৩২২। সেই সূত্র ধরে জানা যায় যে এটি সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি বার্জ। যেটি একটি মালবাহী জাহাজ। এ ধরনের জাহাজে সাধারণত নিজস্ব ইঞ্জিন থাকে না। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তালিকা থেকে যা জানা গিয়েছিল তা হল, একটি স্থানীয় এজেন্ট এই জাহাজটি ভাড়া করে এনেছিল, যে কথা প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বিবিসির কাছে স্বীকারও করেছিলেন। কিন্তু বার্জটি কীভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়ে ভিড়লো সেনিয়ে তারা কিছুই বলতে পারেননি।

সাইক্লোন সিত্রাংয়ের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্রে ভেসে সম্ভবত ‘পরিত্যক্ত’ জাহাজটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভেসে এসেছিল বলে জানায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। তবে কেন বা কীভাবে এটি পরিত্যক্ত করা হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারেননি।

রূপপুর কেন্দ্র কি নিরাপদ?

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে পরের চিঠি লিখেছেন পাবনা থেকে মুহাম্মদ রাকীবুল ইসলাম:

এটা জেনে আমরা আনন্দিত যে আমাদের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে একটি বিশাল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকার নির্মাণ করছেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজ সম্পূর্ণ হলে আমরা দেশবা‌সী এর থেকে কতটুকু উপকৃত হবো এবং এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে কিনা, এই সম্পর্কে যদি আপনারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করতেন তাহলে আমরা অনেক বেশি উপকৃত হতাম।

আমরা রূপপুর কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা ও এর নিরাপত্তা নিয়ে রেডিও এবং অনলাইনে একাধিক প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই করেছি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২৩এর ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিটের সব কাজ শেষ হয়ে গেলে প্রথম চুল্লি থেকে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু করা যাবে। তারা বলছেন রূপপুর কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। তবে সেই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নেয়ার জন্য যে সঞ্চালন লাইন দরকার তার কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা এখনও নিশ্চিত করে তারা বলেননি। আর ঝুঁকি ঠেকানোর প্রশ্নে সরকার জোর দিয়ে বলছে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে হলেও কেন্দ্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা কোন ছাড় দিচ্ছে না।

(সংবাদ উৎস: BBC – বাংলা )
Top